আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

‘যাকাত দিলে বাড়ে সম্পদ, না দিলে আযাব’


অনলাইন ডেস্কঃ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ সূরা আত-তওবা: (৩৪-৩৫)।

উপরোল্লিখিত আয়াতটির মাধ্যমে বুঝা যায়, যাকাত প্রদানের বিধানে স্রষ্টা কতটা কঠোর ঘোষণা দিয়েছেন। যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। বান্দার উপার্জন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করার নাম যাকাত। যেহেতু পবিত্র রমজান মাসে ইবাদতের ফজিলত বেশি তাই এ মাসেই যাকাত প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন মুসলিম উম্মাহর পথ প্রদর্শকরা।

আরবি যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। ইসলামে আবশ্যক ধর্মীয় দান অর্থেই যাকাত শব্দ ব্যবহৃত হয়। কোনো মুসলমানের ধনসম্পদ থেকে তার নিজের ও পরিবারের সারা বছরের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর নির্ধারিত পরিমাণ ধনসম্পদ তার মালিকানায় থাকার এক বছর পূর্ণ হলে সেই সম্পদের নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ শরিয়া-নির্ধারিত খাতগুলোয় প্রদান করাকে যাকাত বলা হয়। যে পরিমাণ ধনসম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়, ইসলামি পরিভাষায় তাকে নিসাব বলা হয়।

কুরআনে ১৯টি সুরায় যাকাতের আলোচনা এসেছে। যেখানে নামাজের পরই যাকাতের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে লোভ থেকে মুক্ত ও পবিত্রতা অর্জন সম্ভব। ধনীদের ধনসম্পদে যে দরিদ্রদের অধিকার রয়েছে, এই সত্যকেও তা প্রতিষ্ঠিত করে।

আরও পড়ুন উসূলে সা’বা: প্রসঙ্গ মাহে রমজান

পবিত্র কুরআনের সুরা জারিয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তাদের (সম্পদশালীদের) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’ এভাবে যাকাতের মাধ্যমে সমর্থ ব্যক্তিদের সম্পদের কিছু অংশ ব্যয়ের ফলে তাদের অবশিষ্ট ধনসম্পদ পবিত্র হয়।

সুরা তওবায় বলা হয়েছে, ‘তুমি ওদের ধনসম্পদ থেকে সদকা আদায় করো। এর মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র করে দেবে।’ যাকাত শব্দের আরেক অর্থ বৃদ্ধি। বস্তুত যাকাত দিলে ধনসম্পদ বাড়ে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে

নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হওয়ার অর্থ হলো, নিত্যদিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেওয়ার পর সাড়ে ৫২ তোলা পরিমাণ (৬১২ দশমিক ৩৬ গ্রাম) রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা (৮৭ দশমিক ৪৮ গ্রাম) পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালের মালিক হওয়া। যাকাত প্রযোজ্য হয় এমন প্রধান প্রধান সম্পদগুলো হলো- স্বর্ণ ও রূপা, গবাদিপশু ও সবধরনের বাণিজ্যিক পণ্য।

দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। অর্থাৎ সাম্প্রতিককালে মুদ্রা বা টাকায় যাকাত আদায় করাটাই সুবিধাজনক।

উল্লেখিত পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২ দশমিক ৫০ শতাংশ) যাকাত দিতে হয়। শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও যাকাত আদায় হবে।

যাকাত কাকে দেবেন

সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মী, নও মুসলিম ও অনুরাগী, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে যাকাত দেওযা যায়।’

যাকাত নির্ধারণের সময়কাল

যাকাত মূলত হিজরি বা চান্দ্রবছরের হিসাব করে দিতে হয়; আর হিজরি বা চান্দ্রবছর ৩৫৪ দিনে হয়। এই ৩৫৪ দিনের হিসাবে দিলে ২ দশমিক ৫ শতাংশ আর যদি সৌরবছর ৩৬৫ দিনের হিসাবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ জাকাত দিতে হবে।

কেউ যদি হিজরি বা চান্দ্র বছর হিসাব করতে না পারে বা ইংরেজি বা সৌরবছর হিসাবে দিতে চায়, তাহলে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কিংবা সতর্কতামূলক ২ দশমিক ৬ শতাংশ দিতে হবে। কারণ সেক্ষেত্রে ১০-১২ দিন বেশি হয়ে যায়। আর ওই বেশি দিনগুলোর জাকাতের পরিমাণ হয় ০ দশমিক ০৭ শতাংশ থেকে ০ দশমিক ০৭৫ শতাংশ, সতর্কতামূলক ০ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি করা ভালো।

তথ্যসূত্র: সংগৃহীত


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর